মডেল মসজিদের এসি বিতর্কে উত্তপ্ত বদলগাছী: ইউএনও'র কার্যালয়ে ‘বন্ধী’ চারটি এসি, তীব্র গরমে কষ্ট পাচ্ছেন নারী নামাজিরা

বদলগাছী (নওগাঁ) থেকে: নওগাঁর বদলগাছী মডেল মসজিদে ধর্মপ্রাণ নারীরা তীব্র গরমে কষ্ট পাচ্ছেন, অথচ মসজিদের জন্য বরাদ্দ চারটি এসি বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) হল রুম কার্যালয়ে। একাধিক ইউএনও বদলি হলেও এই 'দুর্নীতির ধারাবাহিকতা' বজায় রেখেছেন, যার ফলে সরকারি স্থাপনা থেকে মসজিদের সম্পত্তি উদ্ধার না হওয়ায় সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

🔌 দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দীর্ঘসূত্রিতা

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময়ের একজন দুর্নীতিপরায়ণ ইউএনও মসজিদের জন্য বরাদ্দকৃত চারটি এয়ার কন্ডিশনার (এসি) তাঁর সমন্বয় মিটিংয়ের জন্য হল রুম কার্যালয়ে স্থাপন করিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকজন ইউএনও বদলি হয়ে গেলেও কেউ এই অনিয়মের প্রতিবাদ করেননি বা এসিগুলো মসজিদে ফিরিয়ে দেননি। বর্তমানে যিনি ইউএনও হিসেবে কর্মরত, তিনিও এই অনৈতিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন।

> 📌 বিশেষ দ্রষ্টব্য: ইউএনও কার্যালয়ের হলরুমে এসিগুলি ব্যবহৃত হচ্ছে সমন্বয় মিটিংয়ের অজুহাতে, অথচ এগুলি মূলত মসজিদের সম্পত্তি।

🥵 নারীদের নামাজের স্থানে এসির অভাব

বদলগাছী মডেল মসজিদটিতে পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক নামাজ পড়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের দোতলায় পুরুষদের নামাজের জন্য বিশাল স্থানটিতে চারটি এসি লাগানো আছে। অন্যদিকে, তিন তলায় নারীদের জন্য নির্ধারিত নামাজ পড়ার স্থানে এসির জন্য বৈদ্যুতিক সব কাজ সম্পন্ন থাকা সত্ত্বেও কোনো এসি স্থাপন করা হয়নি। বিশেষ করে জুমার নামাজের দিন বিভিন্ন বয়সের অনেক নারী ও শিশুকন্যা নামাজ আদায় করতে আসেন, এবং প্রচণ্ড গরমে তাঁদের অত্যন্ত কষ্ট ভোগ করতে হয়।

জনসাধারণের মতে, ইউএনও ভবনে লাগানো চারটি এসির মধ্যে অন্তত দুইটি এসিও যদি মহিলাদের নামাজের স্থানে প্রদান করা হয়, তবে তীব্র গরমে মা-বোনদের অনেক উপকার হবে।

👩‍💼 বর্তমান মহিলা ইউএনও'র ভূমিকায় হতাশা

বর্তমানে বদলগাছী উপজেলায় একজন মহিলা ইউএনও কর্মরত আছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, তিনি একজন মহিলা হয়েও মহিলা নামাজিদের এই কষ্টকর অবস্থার ব্যাপারে কিছুটা উদাসীন। মসজিদটি তাঁর বাসভবনের কাছে হওয়া সত্ত্বেও তিনি কোনো জুমার নামাজে অংশগ্রহণ করেন না, যা এলাকার অন্যান্য মুসলিম নারীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি করেছে।

🙏 সাধারণ জনগণের দাবি ও প্রত্যাশা

বদলগাছীর সাধারণ ধর্মপ্রাণ জনগণ বর্তমান ইউএনও মহোদয়ের কাছে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন— তিনি যেন পূর্ববর্তী ইউএনওদের করে যাওয়া এই 'দুর্নীতির ধারাবাহিকতা' আর বজায় না রাখেন। একজন মুসলিম নারী হিসাবে তিনি যেন অবিলম্বে মসজিদের জন্য বরাদ্দ এসিগুলি ফেরত দিয়ে মহিলাদের নামাজের স্থানে স্থাপন করার ব্যবস্থা করেন।

পাশাপাশি, বর্তমান মহিলা ইউএনও প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে মসজিদে অংশগ্রহণ করে অন্যান্য নারীদের উৎসাহ জুগিয়ে, যাঁরা এখনো মসজিদে আসতে লজ্জা পান, তাঁদের প্রতি এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন।

জনগণের প্রত্যাশা, বর্তমান প্রশাসন দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে মডেল মসজিদের পরিবেশকে সকলের জন্য আরামদায়ক করে তুলবে এবং দুর্নীতির এই অধ্যায় শেষ করবে।

পরবর্তী পদক্ষেপ: স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই অভিযোগের বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া গেলে, তা দ্রুত প্রতিবেদনে

 যুক্ত করা হবে।

কর্মবিরতির নামে শ্রেণিকক্ষে তালা—শিক্ষক সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র



বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আবারও নেমে এসেছে অরাজকতার ছায়া। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকদের একাংশ কর্মবিরতি কর্মসূচির নামে শ্রেণিকক্ষ বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে। শিক্ষার্থী যখন বই হাতে ক্লাসে প্রবেশ করতে আসে, তখন শিক্ষক নিজেই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন—এ যেন শিক্ষা পেশার মর্যাদাকে মাটিতে মিশিয়ে দেয়ার এক চিত্র।

শিক্ষকতা একসময় ছিল সম্মান ও ত্যাগের প্রতীক। কিন্তু আজ সেই পেশার একটি বড় অংশ পরিণত হয়েছে ব্যক্তিস্বার্থের উপার্জনের কেন্দ্রে। বেতন, প্রাইভেট টিউশনি, স্কুল সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আর্থিক সুবিধা—এসব মিলিয়েও যেন তাদের পেট ভরছে না। অনেকে স্কুলের বাইরে জমি চাষ, পশুপালন বা ছোটখাটো ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। অথচ কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠনের প্রশ্নে অনীহা প্রকট।

আরও দুঃখজনক হচ্ছে, এদের অনেকেই প্রকৃত যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, বরং নামমাত্র সনদ ও সেকেন্ড কিংবা থার্ড ডিভিশনের ফলাফলের পর কয়েক লক্ষ টাকার উৎকোচ দিয়ে চাকরি অর্জন করেছেন। এই অবৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যারা শিক্ষক হয়েছেন, তাদের কাছ থেকে পেশাদারিত্ব বা শিক্ষার্থীর প্রতি দায়িত্ববোধের প্রত্যাশা করাই যেন বিলাসিতা।

নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো—বদলগাছি সরকারি মডেল পাইলট হাই স্কুল ও লাবণ্যপ্রভা কমিউনিটি গার্লস হাই স্কুল এবং পাহাড়পুর আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয়—এ সম্প্রতি শিক্ষকদের একাংশ কর্মবিরতি ঘোষণা করে শ্রেণিকক্ষ বন্ধ রেখেছেন। 

শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হলেও শিক্ষকরা পড়াতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। ফলে পুরো এলাকা জুড়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।


অভিভাবকদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, এই কর্মসূচির পেছনে শিক্ষকদের প্রকৃত দাবি নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রাধান্য পাচ্ছে। বদলগাছির উভয় বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক, এমনকি প্রধান শিক্ষকসহ সহযোগী শিক্ষকরা আওয়ামীপন্থী সংগঠনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। স্থানীয়দের ধারণা, শিক্ষা ব্যবস্থার মান নষ্ট করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্যই এই কর্মবিরতির আড়ালে এমন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।

একজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমার ছেলে ক্লাস নাইনে পড়ে। আজ সকালে স্কুলে গিয়ে দেখে গেট খোলা, কিন্তু ক্লাসের দরজা বন্ধ। শিক্ষকরা অফিসে বসে আছেন, কেউ পড়াতে যাচ্ছেন না। ওরা নাকি আন্দোলন করছে। কিন্তু দোষটা কে ভোগ করছে? আমাদের বাচ্চারা।”

শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ক্ষোভ স্পষ্ট। ক্লাস এইটের ছাত্রী রিতু আক্তার জানায়, “আমরা সকালে এসে দেখি ক্লাস বন্ধ। ম্যাডাম বললেন, আন্দোলন চলছে, পড়া হবে না। এখন তো পরীক্ষাও কাছে, কী করব বুঝতে পারছি না।”

ক্লাস টেনের শিক্ষার্থী সজল হোসেন বলেন, “এখন আমাদের এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। এই সময়ে ক্লাস বন্ধ থাকলে তো আমরা পিছিয়ে যাব। শিক্ষকরা যদি নিজেরাই ক্লাস না নেন, তাহলে পড়ব কার কাছে?”

একই ধরনের প্রতিক্রিয়া এসেছে ক্লাস সেভেনের ছাত্র আরিফুলের কাছ থেকেও। তার ভাষায়, “আমরা তো পড়তে এসেছি। স্যাররাই ক্লাসে ঢুকতে দিচ্ছেন না। এটা তো অন্যায়।”

দাবি আদায় করা নাগরিক অধিকার। কিন্তু দাবি জানানোরও শালীন উপায় রয়েছে। যে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন জ্ঞান অর্জনের জন্য বিদ্যালয়ে আসে, তাদের ক্লাসে ঢুকতে না দেয়া কোনোভাবেই ন্যায্য আন্দোলনের অংশ হতে পারে না। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের দাবি নয়, বরং শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তিই দুর্বল হচ্ছে।

বর্তমানে দেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব পালন করছে, যার মূল কাজ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন। এই সরকারের কাছে শিক্ষকরা যখন নানা দাবি জানাচ্ছেন, তা কার্যত অযৌক্তিক, কারণ নীতি নির্ধারণ বা আর্থিক বরাদ্দের ক্ষমতা এখন সীমিত। তাদের প্রকৃত দাবি জানানো উচিত নির্বাচিত সরকারের কাছে, যারা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে।

কিন্তু আন্দোলন এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সরকারি ঘোষণা ছাড়াই বহু স্কুল কার্যত বন্ধ। শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে এলেও তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ যেন শিক্ষা নয়, বরং বিভ্রান্তির পাঠচক্র চলছে।

এই পরিস্থিতি শুধু শিক্ষা প্রশাসনের নয়, গোটা জাতির জন্যই একটি সতর্ক সংকেত। শিক্ষক সমাজ যদি নিজেদের আত্মসমালোচনা না করে, তবে আগামী প্রজন্মের নৈতিকতা, জ্ঞান ও দায়িত্ববোধ—সবই প্রশ্নের মুখে পড়বে।

জ্ঞানবিরোধী আন্দোলন কখনও শিক্ষক সমাজের সম্মান বাড়ায় না; বরং ভবিষ্যতের চোখে তাদের অযোগ্য করে তোলে।

আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অন্যতম দোসর বদলগাছি লাবণ্য প্রভা কমিউনিটি গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক।




লুৎফুজ্জামান বাবর, দশ ট্রাক অস্ত্র এবং একটি চেপে রাখা সত্য


সম্প্রতি দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের খালাস পাওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পুরোনো বিতর্ককে নতুন করে উসকে দিয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠিত ন্যারেটিভকে এই রায় এমনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে যে, এর পেছনের রাজনীতি ও বাস্তবতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। যে আলাপ বছরের পর বছর ধরে চলেছে—"বাবর দশ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে আসছিলেন"—তা যদি মিথ্যাই হয়, তবে আসল সত্যটা কী?

যুক্তির কাছে কি আবেগ পরাজিত?

প্রথমেই যে প্রশ্নটি সামনে আসে, তা হলো—লুৎফুজ্জামান বাবর কেন নিজের সরকারের সময়ে অবৈধভাবে অস্ত্র আনবেন? তিনি তখন রাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, দেশের সকল আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থা তার অধীনে। যার নিয়ন্ত্রণে পুরো দেশের বৈধ অস্ত্রের ভান্ডার, তার কেন লুকিয়ে দশ ট্রাক অস্ত্র আনার প্রয়োজন পড়বে? এই সাধারণ যুক্তি বরাবরই আওয়ামী লীগের তৈরি করা রাজনৈতিক ন্যারেটিভের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে।

সবচেয়ে বড় পরিহাস হলো, যে জোট সরকারের আমলে এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের চালান আটক করা হয়েছিল, সেই সরকারকেই পরবর্তীকালে এই মামলার আসামি বানানো হয়। যারা অস্ত্র ধরলো, তারাই হয়ে গেল অপরাধী—রাজনীতির কি विचित्र খেলা!

অস্ত্রের আসল গন্তব্য কোথায় ছিল?

সত্যিকার অর্থে, এই অস্ত্রের চালান বাংলাদেশের জন্য ছিল না। এটি ছিল ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা (ULFA)-এর জন্য। বাংলাদেশকে নিছক একটি রুট হিসেবে ব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত এই গোষ্ঠীর হাতে অস্ত্রগুলো পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল।

তৎকালীন সরকারের একটি অংশ হয়তো চেয়েছিল, চালানটি নিরাপদে উলফার হাতে পৌঁছাক। geopolitics বা ভূ-রাজনীতির বিবেচনায় অনেকেই মনে করেন, ভারতের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে উলফার মতো শক্তিকে সহায়তা করা ছিল একটি যৌক্তিক কৌশল। যেকোনো স্বাধীন দেশেরই উচিত প্রতিবেশীর আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। তবে, প্রশাসনের অন্য কোনো অংশের হস্তক্ষেপে চালানটি ধরা পড়ে যায়, যা জোট সরকারের জন্যই একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে।

পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সরকার এই ঘটনাকে পুঁজি করে একটি রাজনৈতিক ন্যারেটিভ তৈরি করে, যেখানে বিএনপি-জামায়াত জোটকে সরাসরি "জঙ্গিবাদী" ও "রাষ্ট্রদ্রোহী" হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়। দুঃখজনকভাবে, অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বক্তা আজও সেই একই ন্যারেটিভ অনুসরণ করে চলেছেন, যা সত্যকে আড়াল করে কেবল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা মাত্র।

বাবর: একটি নাম, একটি প্রতীক

লুৎফুজ্জামান বাবর আজ কেবল একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। তিনি সেই শক্তির প্রতীক, যা আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চেয়েছিল। তার বিরুদ্ধে এত বছরের রাজনৈতিক প্রচারণা প্রমাণ করে যে, তিনি দিল্লির জন্য একটি বড় আতঙ্কের নাম ছিলেন। বাবর প্রমাণ করেছেন, দেশপ্রেম এবং জাতীয় স্বার্থকে সবার উপরে স্থান দিলে যেকোনো আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সম্ভব।

বাবর হওয়া সহজ নয়। এর জন্য যে সাহস, দূরদর্শিতা এবং দেশপ্রেম প্রয়োজন, তা সবার থাকে না। তার মুক্তি কেবল একজন ব্যক্তির মুক্তি নয়, এটি একটি চেপে রাখা সত্যের মুক্তি।


মস্তিষ্কের যত্ন: যে অভ্যাসগুলো অজান্তেই আপনার মস্তিষ্কের ক্ষতি করছে


আমাদের অস্তিত্বের কেন্দ্রবিন্দু হলো মস্তিষ্ক। প্রায় ১০০ বিলিয়ন কোষের সমন্বয়ে গঠিত এই বিস্ময়কর অঙ্গটি আমাদের প্রতিটি চিন্তা, অনুভূতি এবং কর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে। মস্তিষ্ক যত বেশি ব্যবহৃত হয়, এটি তত বেশি শক্তিশালী ও কার্যকর হয়ে ওঠে। তবে বয়স ৪০ পেরোলে এর কার্যক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই কমতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে এটি সংকুচিত হতে থাকে। ৬০ বছর বয়সের পর এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হয়, যার ফলে স্মৃতিশক্তি লোপ পায় এবং ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

দৈনন্দিন জীবনে আমরা জেনে বা না জেনে এমন কিছু কাজ করি, যা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করে। বিজনেস গ্রোথ মেন্টরদের মতে, এই অভ্যাসগুলো আমাদের মস্তিষ্কের সুদূরপ্রসারী ক্ষতি করে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক সেই মারাত্মক অভ্যাসগুলো সম্পর্কে।

১. আলোর স্বল্পতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি

প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় অন্ধকারে বা কম আলোতে থাকা আমাদের মস্তিষ্কের ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি বিষণ্ণতার মতো মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে, যা মস্তিষ্কের সার্বিক কার্যকারিতা মন্থর করে দেয়। প্রাকৃতিক আলো আমাদের মস্তিষ্কের জন্য অপরিহার্য। এটি মনকে সতেজ রাখে এবং মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। শীতপ্রধান দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার পেছনেও আলোর অভাবজনিত বিষণ্ণতাকে একটি বড় কারণ হিসেবে দেখা হয়।

২. নেতিবাচক খবরের করাল গ্রাস

অতিরিক্ত নেতিবাচক খবর দেখা, পড়া বা শোনার অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। এই ধরনের খবর আমাদের মনে গভীর উদ্বেগ ও ভয় তৈরি করে। এই মানসিক চাপ ধীরে ধীরে মস্তিষ্ক এবং শরীরের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে, যা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

৩. উচ্চ শব্দের বিপদ: শ্রবণশক্তি ও মস্তিষ্কের ক্ষয়

উচ্চ ভলিউমে গান শোনা বা কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ থাকা মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। টানা ৩০ মিনিট উচ্চ শব্দে থাকলে শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে লোপ পেতে পারে। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে শ্রবণশক্তি হ্রাসের সঙ্গে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া এবং মস্তিষ্কের টিস্যু নষ্ট হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। যারা হেডফোনে উচ্চ শব্দে গান শোনেন, তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বোঝার জন্য মস্তিষ্ককে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, যা মস্তিষ্কের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করে।

৪. সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: একাকিত্বের নীরব আঘাত

মানুষ স্বভাবগতভাবেই সামাজিক জীব। কাছের মানুষের সঙ্গে সুস্থ ও সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখা আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজার হাজার বন্ধু থাকার চেয়ে বাস্তবে দু-একজন ভালো বন্ধু থাকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যারা পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তারা মানসিকভাবে বেশি হাসিখুশি, কর্মঠ এবং সুস্থ থাকেন। তাদের মধ্যে আলঝেইমারের ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে কম।

৫. ডিজিটাল আসক্তি ও স্ক্রিন টাইমের প্রভাব

টেলিভিশন, ল্যাপটপ বা মোবাইলের স্ক্রিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকা মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম আমাদের সৃজনশীলতা নষ্ট করে এবং মস্তিষ্কের গঠনগত ক্ষতি করতে পারে। এর আরেকটি বড় নেতিবাচক দিক হলো, স্ক্রিনে বেশি সময় কাটানোর ফলে আমরা কথা কম বলি। মানুষের সঙ্গে কথা বলা ও ভাবের আদান-প্রদান মস্তিষ্কের জন্য একটি জরুরি ব্যায়াম। এই অনুশীলন কমে গেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও কমে যায়।

৬. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও মস্তিষ্কের সংকোচন

অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এবং জাঙ্ক ফুড (যেমন: বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কোমল পানীয়) আমাদের শরীর ও মস্তিষ্ক উভয়ের জন্যই বিষের মতো। এই ধরনের খাবার মস্তিষ্কের শেখার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দায়ী অংশগুলোকে সংকুচিত করে ফেলে। অন্যদিকে, সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্কের কোষকে সজীব রাখে এবং এর ক্ষয় রোধ করে।

৭. শরীরচর্চার অভাব ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি

নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে কেবল শারীরিক রোগ নয়, মস্তিষ্কের রোগ হওয়ার আশঙ্কাও বহুগুণে বেড়ে যায়। শরীরচর্চার অভাবে ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা দেখা দেয়, যার প্রতিটিই আলঝেইমার রোগের ঝুঁকির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। নিয়মিত ব্যায়াম মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং একে সচল ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

৮. অপর্যাপ্ত ঘুম: মস্তিষ্কের জন্য বিশ্রামহীনতা

মস্তিষ্কের восстановления এবং স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য ঘুম অপরিহার্য। দৈনিক ছয় ঘণ্টার কম ঘুম মস্তিষ্কের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে এবং এর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

আমাদের মস্তিষ্কই আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাই দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট এই ভুলগুলো এড়িয়ে চলে একটি সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে সচল ও ধারালো রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে বাংলাদেশের জনগণ


জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং নেতৃত্বের প্রত্যাশা-

প্রতারণার পথ ছেড়ে, স্বচ্ছতার রাজনীতির সময় এখন

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে বাংলাদেশের জনগণ তাদের নেতৃত্বের প্রতি সুনির্দিষ্ট প্রত্যাশা পোষণ করছে। দেশের আপামর জনসাধারণ এমন একজন নেতাকে চায় যিনি শুধু আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধিই নয়, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে সক্ষম। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের মতো বিশ্বব্যাপী পরিচিত এবং ধনে-জ্ঞানে সমৃদ্ধ ব্যক্তিত্বের প্রতি জনগণের একটি অংশের মধ্যে গভীর আস্থা দেখা যাচ্ছে। তাদের মতে, ইউনুসের মতো একজন নেতা বাংলাদেশের সম্মানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন এবং তার অনুপস্থিতিতে কোনো রাজনৈতিক দল বা সামরিক শক্তিকে বাংলার মসনদে মেনে নিতে তারা নারাজ।

ক্ষমতা এবং দালালির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান-

বাংলাদেশের জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ক্ষমতা-কেন্দ্রিক রাজনীতি এবং বিদেশী প্রভাবকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। তারা মনে করে, যারা দেশের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিগত বা বিদেশী এজেন্ডাকে প্রাধান্য দেয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনগণ দ্বিধা করবে না। "সময় থাকতেই ভালো হোন, দালালি ছাড়ুন দেশের স্বার্থে নিজেকে গড়ুন" - এমন স্লোগানগুলি এই মনোভাবেরই প্রতিফলন। এই স্লোগানগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, জনগণ দুর্নীতি এবং দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা যেকোনো পক্ষকে উৎখাত করতে প্রস্তুত। এটি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের আত্মমর্যাদার প্রতি তাদের অঙ্গীকারের প্রকাশ।

গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার প্রতি জনগণের দৃঢ় সংকল্প-

বাংলাদেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে আপস করতে প্রস্তুত নয়। তারা মনে করে, যারা দেশের উন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করবে বা বিদেশী শক্তির দালালি করবে, তাদের সমূলে বিনাশ করতে জনগণ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অধ্যাপক ইউনুসের প্রতি যেকোনো নেতিবাচক মন্তব্যকে তারা দেশের অগ্রগতির পথে বাধা হিসেবে দেখছে। এই মনোভাব দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এবং এটি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জনগণের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।

পিনাকি ভট্টাচার্যের সাক্ষাৎকার: নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, দেশত্যাগ ও বর্তমান রাজনীতি


চ্যানেল আই-এর "সালাম স্টিল স্ট্রেট কাট" অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকি ভট্টাচার্য। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত না থাকলেও তার প্রভাব ও বক্তব্য নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আলোচনা। এই সাক্ষাৎকারে তিনি তার দেশত্যাগের কারণ, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ের অভিজ্ঞতা, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতের দর্শন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।


প্রশ্নোত্তর পর্ব

১. দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার কারণ

প্রশ্ন: আপনি বাংলাদেশকে নিয়ে এত স্বপ্ন দেখেন, এত কিছু করতে চান—তাহলে কেন আপনাকে বিদেশে আশ্রয় নিতে হলো?  


উত্তর: ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়** ডিজিএফআই (DGFI) আমাকে তাদের অফিসে ডাকে। মেজর ফারহান নামে একজন ফোন করে বলেন, "আপনার সাথে জরুরি আলাপ আছে।"  

- আমি প্রথমে প্রস্তাব দিই, "আপনি আমার অফিসে বা নিরপেক্ষ স্থানে আসুন," কিন্তু তারা জোর দিয়ে বলেন, "আজই ডিজিএফআই অফিসে আসতে হবে।"  

- আমার সহকর্মীরা (এমনকি বর্তমান সরকারের মন্ত্রী সুভ্র ভাইও) পরামর্শ দেন, "ডিজিএফআই অফিসে যেও না, লুকিয়ে পড়ো।"  

- পরদিন আমার বাসা ও অফিসে ডিজিএফআই রেইড করে। আমি প্রায় পাঁচ মাস আত্মগোপনে থাকি।  

নির্বাচনের পরও আমার বাসার সামনে ডিজিএফআই গার্ড নজরদারি চালায়।  

ফ্রান্সে আশ্রয় নেওয়ার কারণ: আমি একটি ফ্রেঞ্চ মানবাধিকার সংগঠনের সাথে কাজ করতাম, তারাই আমার ভিসা ও রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে।  


২. সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহারের কারণ

প্রশ্ন: আপনি গালিগালাজ ও আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করেন—এটা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে না?  


উত্তর: বাংলাদেশের দুর্দশার জন্য দায়ী এলিট শ্রেণি যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাচার করে।  

 সাধারণ মানুষ (রিকশাচালক, গার্মেন্টস কর্মী, কৃষক) দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখে, কিন্তু এলিটরা তাদের শোষণ করে।  

এলিটদের তিনটি ভয়:

  ১. সম্মান হারানোর ভয়,  

  ২. মার খাওয়ার ভয়,  

  ৩. সম্পদ হারানোর ভয়।  

  আমি তাদের সম্মানহানি করি, যাতে তারা কিছুটা সংযত হয়।"  

"যারা দেশের মানুষকে দাস বানিয়ে রেখেছে, তাদের গালিই প্রাপ্য।"  

৩. জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

প্রশ্ন: অনেকে বলেন, এই অভ্যুত্থান আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ—আপনি কি একমত?  


উত্তর: "আমার লড়াই নতুন নয়, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে আমি শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি।"  

 "আমি ফ্যাসিবাদের পতন চাই, এবং এটা বিপ্লবের মাধ্যমেই সম্ভব।"  

"যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে যে আমি কারো দ্বারা 'অ্যাসাইন' হয়েছি, তাহলে তারা প্রমাণ হাজির করুক।"  

৪. আওয়ামী লীগের বিরোধিতার কারণ 

প্রশ্ন: আপনি গণজাগরণ মঞ্চের সাথে যুক্ত ছিলেন কী কারণে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে গেলেন?  

উত্তর:

২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের গণহত্যা আমার মনে গভীর প্রভাব ফেলে। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এটাকে "ঢাকা পরিষ্কার করা" বলে উল্লেখ করে, যা আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য।  

"আমি বুঝতে পারি, বাংলাদেশে ইসলামবিদ্বেষী একটি গোষ্ঠী সক্রিয়, যারা ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়।"  

- "আওয়ামী লীগ, বাম ও প্রগতিশীলরা এই এজেন্ডাকে সমর্থন করে।"  

- "আমি বিএনপি, সিপিবি, এমনকি নিজের দলের সমালোচনাও করি—নিরপেক্ষ থাকি।"  


৫. বর্তমান রাজনৈতিক দর্শন

প্রশ্ন: আপনি কি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হতে চান?  


উত্তর:  "না, আমি স্বাধীন চেতা। দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে—এটা আমার জন্য অসম্ভব।"  

"আমি আদর্শবাদকেও বিশ্বাস করি না, কারণ আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠে।"  

৬. প্রফেসর ইউনুসের সরকার ও সংস্কারের ভবিষ্যৎ

প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, ইউনুস সরকার একটি 'আধা-বিপ্লবী সরকার'?  

উত্তর:

- "হ্যাঁ, এই সরকার জনগণের চাপে কিছু সংস্কার করছে।"  

- "তবে ইউনুস রাজনীতিবিদ নন, তাই কিছু ভুল হচ্ছে।"  

"সংস্কার শেষ না করে নির্বাচন দিলে ২০০৮-এর পুনরাবৃত্তি হবে—ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হবে।"  

- "বিএনপিকেও বলব, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা ঠিক করতে সময় দিন।"  

৭. এনসিপি ও নতুন রাজনৈতিক ধারা 

প্রশ্ন: জুলাই অভ্যুত্থানের তরুণ নেতৃত্বে গঠিত এনসিপিকে আপনি কিভাবে দেখেন?  


উত্তর:

- "এনসিপির মধ্যে জাসদের মতো বিপ্লবী জোশ নেই।"  

- "তাদের পরিষ্কার রাজনৈতিক দর্শন নেই—শুধু নির্বাচনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।"  

- "ভালো লিডারশিপ ও কর্মসূচি না আসলে এনসিপি টিকবে না।"  

৮. চঞ্চল চৌধুরী ও 'ফ্যাসিস্ট দোসর' বিতর্ক 

প্রশ্ন: চঞ্চল চৌধুরীর মতো শিল্পীদের 'স্বৈরাচারের দোসর' বলা কি ঠিক?  


উত্তর:  "চঞ্চল চৌধুরী হাসিনার প্রশংসা ও ষষ্ঠাঙ্গ প্রণাম করেছে।"  

- "কিন্তু শুধু সরকারের সাথে কাজ করলেই কাউকে 'ফ্যাসিস্ট' বলা যায় না।"  

- "আমি তাকে সিনেমায় কাস্ট করব না, কারণ দর্শক তাকে গ্রহণ করবে না।"  

- "যারা ফ্যাসিজমকে সমর্থন করে, তাদের **গ্লানির মধ্য দিয়ে যেতে হবে।"    

পিনাকি ভট্টাচার্যের এই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ভবিষ্যতের সংগ্রামের চিত্র। তার মতে, **সিস্টেম পরিবর্তন না করে নির্বাচন অর্থহীন**, এবং **এলিট শ্রেণির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই প্রকৃত বিপ্লব**।  


#পিনাকি_ভট্টাচার্য #নিরাপদ_সড়ক_আন্দোলন #বাংলাদেশ_রাজনীতি**

শাহবাগে বিক্ষোভ: রাজনৈতিক দলের নিষেধাজ্ঞা ও জাতীয় সঙ্গীত বিতর্ক



ঢাকা: শাহবাগে সম্প্রতি সংঘটিত এক প্রতিবাদ কর্মসূচি দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী ছাত্র ও যুব সমাজ একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধের জোরালো দাবি জানিয়েছে।

বিক্ষোভকালে বিতর্কিত স্লোগান যেমন "অমুক দলের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না" ইত্যাদি ধ্বনিত হয়। একই সময়ে, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার সময় কতিপয় ব্যক্তির কর্তৃক তাতে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাগুলি তাৎক্ষণিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এই ঘটনার অব্যবহিত পরেই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা জনাব মফিজুল হক তার ব্যক্তিগত সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টে একটি মন্তব্য প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি দুটি প্রধান বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন:

প্রথমত, তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অমীমাংসিত বিষয়গুলির চূড়ান্ত নিষ্পত্তির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি ভাবাদর্শের অনুসরণ পরিহার করা অত্যাবশ্যক। জনাব হক বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, একটি বিদেশি শক্তি এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে এবং তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও তাদের সহযোগী যুদ্ধাপরাধীরা এখনো সেই পথে হাঁটেনি। তিনি গণহত্যার সমর্থনে যেকোনো ধরনের অস্পষ্ট বক্তব্য প্রদান বন্ধের আহ্বান জানান। পাশাপাশি, যারা বর্তমানের স্থিতিশীল পরিস্থিতিকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।

দ্বিতীয়ত, জনাব হক একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি অতীত সময়ের বেশ কিছু সংঘাত ও প্রাণহানির ঘটনার জন্য তাদের দায়ী করেন এবং তাদের আদর্শ ও কার্যক্রমের সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, এই গোষ্ঠীটি পূর্বে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আঁতাত করে বিভিন্ন গর্হিত কাজ করেছে এবং এখনো তারা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার পরিপন্থী আচরণ করছে। তিনি মনে করেন, এই গোষ্ঠীটি শীঘ্রই তাদের ভুল বুঝতে পারবে এবং তাদের অপকর্মের জন্য অনুতপ্ত হবে।

উপদেষ্টা মফিজুল হকের এই মন্তব্যটি সামাজিক মাধ্যমে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং বহু সংখ্যক ব্যবহারকারী এটি শেয়ার করেন।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়, নবজাগরণ নাগরিক মঞ্চ (ননিম) নামক একটি সংগঠন একটি বিবৃতি প্রদান করে। বিবৃতিতে তারা স্পষ্টভাবে জানায় যে, সাম্প্রতিক বিক্ষোভে তাদের কোনো সদস্য বিতর্কিত স্লোগান অথবা দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিরোধী কোনো মন্তব্য করেনি। ননিম উল্লেখ করে, উত্থাপিত আপত্তিকর স্লোগানগুলির দায়ভার সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপর বর্তায় এবং তাদের সংগঠনকে এর সাথে যুক্ত করা ভিত্তিহীন ও অনাকাঙ্ক্ষিত। বরং, ননিম-এর সদস্যগণের বক্তব্য ও স্লোগানে দেশের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ও চেতনার প্রতিফলন ছিল।

ননিম আরও জানায় যে, যখন আন্দোলনকারীরা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করছিলেন, তখন একটি পক্ষ বিরোধিতা করলেও অন্যরা দৃঢ়ভাবে সঙ্গীতটি সম্পন্ন করেন।

শাহবাগের এই ঘটনা এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন পক্ষের প্রতিক্রিয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সূত্রপাত করেছে এবং জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি

 করেছে।