ঢাকা: শাহবাগে সম্প্রতি সংঘটিত এক প্রতিবাদ কর্মসূচি দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী ছাত্র ও যুব সমাজ একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধের জোরালো দাবি জানিয়েছে।
বিক্ষোভকালে বিতর্কিত স্লোগান যেমন "অমুক দলের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না" ইত্যাদি ধ্বনিত হয়। একই সময়ে, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার সময় কতিপয় ব্যক্তির কর্তৃক তাতে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাগুলি তাৎক্ষণিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এই ঘটনার অব্যবহিত পরেই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা জনাব মফিজুল হক তার ব্যক্তিগত সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টে একটি মন্তব্য প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি দুটি প্রধান বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন:
প্রথমত, তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অমীমাংসিত বিষয়গুলির চূড়ান্ত নিষ্পত্তির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি ভাবাদর্শের অনুসরণ পরিহার করা অত্যাবশ্যক। জনাব হক বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, একটি বিদেশি শক্তি এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে এবং তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও তাদের সহযোগী যুদ্ধাপরাধীরা এখনো সেই পথে হাঁটেনি। তিনি গণহত্যার সমর্থনে যেকোনো ধরনের অস্পষ্ট বক্তব্য প্রদান বন্ধের আহ্বান জানান। পাশাপাশি, যারা বর্তমানের স্থিতিশীল পরিস্থিতিকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।
দ্বিতীয়ত, জনাব হক একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি অতীত সময়ের বেশ কিছু সংঘাত ও প্রাণহানির ঘটনার জন্য তাদের দায়ী করেন এবং তাদের আদর্শ ও কার্যক্রমের সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, এই গোষ্ঠীটি পূর্বে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আঁতাত করে বিভিন্ন গর্হিত কাজ করেছে এবং এখনো তারা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার পরিপন্থী আচরণ করছে। তিনি মনে করেন, এই গোষ্ঠীটি শীঘ্রই তাদের ভুল বুঝতে পারবে এবং তাদের অপকর্মের জন্য অনুতপ্ত হবে।
উপদেষ্টা মফিজুল হকের এই মন্তব্যটি সামাজিক মাধ্যমে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং বহু সংখ্যক ব্যবহারকারী এটি শেয়ার করেন।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়, নবজাগরণ নাগরিক মঞ্চ (ননিম) নামক একটি সংগঠন একটি বিবৃতি প্রদান করে। বিবৃতিতে তারা স্পষ্টভাবে জানায় যে, সাম্প্রতিক বিক্ষোভে তাদের কোনো সদস্য বিতর্কিত স্লোগান অথবা দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিরোধী কোনো মন্তব্য করেনি। ননিম উল্লেখ করে, উত্থাপিত আপত্তিকর স্লোগানগুলির দায়ভার সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপর বর্তায় এবং তাদের সংগঠনকে এর সাথে যুক্ত করা ভিত্তিহীন ও অনাকাঙ্ক্ষিত। বরং, ননিম-এর সদস্যগণের বক্তব্য ও স্লোগানে দেশের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ও চেতনার প্রতিফলন ছিল।
ননিম আরও জানায় যে, যখন আন্দোলনকারীরা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করছিলেন, তখন একটি পক্ষ বিরোধিতা করলেও অন্যরা দৃঢ়ভাবে সঙ্গীতটি সম্পন্ন করেন।
শাহবাগের এই ঘটনা এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন পক্ষের প্রতিক্রিয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সূত্রপাত করেছে এবং জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি
করেছে।
0 comments: