প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য দেশের ৫৫ টি
সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পি টি আই) এক বছর মেয়াদি
সি-ইন-এড যা বর্তমানে দেড় বছর মেয়াদী ডিপ-ইন-এড কোর্স পরিচালনা করে থাকে।
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) এই কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও
দেশের ৫০৮ টি উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে সারা বছর বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণ সহ
বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ
চলমান থাকে। এছাড়া প্রাথমিকে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ছাড়াও মন্ত্রনালয়, অধিদপ্তর, নেপ, বিভাগীয় কার্যালয়, জেলা কার্যালয় ও উপজেলা কার্যালয় ও রিসোর্স সেন্টারে কর্মরত কর্মকর্তাদের জন্যও রয়েছে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ।
চলমান থাকে। এছাড়া প্রাথমিকে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ছাড়াও মন্ত্রনালয়, অধিদপ্তর, নেপ, বিভাগীয় কার্যালয়, জেলা কার্যালয় ও উপজেলা কার্যালয় ও রিসোর্স সেন্টারে কর্মরত কর্মকর্তাদের জন্যও রয়েছে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ।
এই হল মোটামুটি প্রাথমিকে শিক্ষক
প্রশিক্ষণের কার্যকাল ও অবকাঠামোগত দিক। এখন দেখা যাক এসব প্রশিক্ষণ
কার্যক্রমের ফলাফল কতটুকু। সাধারণ হিসেবেই বোঝা যায় আলোচিত প্রশিক্ষণ
কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের
অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন ছাড়াও প্রশিক্ষকদের বেতনভাতা, প্রশিক্ষাণার্থী
ভাতা ও রিসোর্স পার্সনসদের সম্মানি বাবদ বছরে মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করতে
হয়। দেশীয় ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার মাধ্যমে এ অর্থের জোগান দেয়া হয়।
কিন্তু এসব প্রশিক্ষণের আউটপুট
কতটুকু? বাস্তবতা অনেক ক্ষেত্রেই হতাশার। আমরা প্রাথমিক শিক্ষকরা মূলত
উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তি ও চাকরীর শর্ত পূরণের জন্য সি-ইন-এড/ ডিপ-ইন-এড
প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকি। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান শ্রেণিকক্ষে কতটুকু বাস্তবায়িত
হচ্ছে তা চিন্তার বিষয়। এ ব্যাপারে মূল্যায়ন ও তদারকির কোনো ব্যবস্থা নেই
বললেই চলে।
যাই হোক, বাস্তবভিত্তিক
শিক্ষক-প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। আবার শুধু প্রশিক্ষণ দিলেই চলবে না।
প্রশিক্ষণের জ্ঞান কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। প্রশিক্ষণ
প্রতিষ্ঠানের সেবার মান ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটানো সময়ের দাবি। দরকার
প্রশিক্ষণ কারিকুলামের সংস্কার এবং ব্যবহারিক পর্যায় বাড়ানো। প্রশিক্ষণ
ভাতা বাড়ালে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণের ব্যাপারে শিক্ষকদের
দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। শুধুমাত্র উচ্চতর স্কেল বা ভাতা/সম্মানীর আশায়
প্রশিক্ষণ গ্রহণ করাটা রীতিমতো অনৈতিক।
পেশাগত মান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যই
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ গ্রহণে উৎসাহী হওয়া উচিত। কারণ যে কোনো পেশার উন্নয়নের
জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য
সঞ্জীবনী কোর্সের তেমন কোনো ব্যবস্থা বর্তমানে নেই। ফলে প্রশিক্ষণলব্ধ
জ্ঞানের কোনো ফিডব্যাক শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া যায় না। এতে প্রশিক্ষণের
উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। অপচয় হয় বিপুল অঙ্কের অর্থের।
আবার উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের (ইউ আর
সি)-র প্রশিক্ষণ গুলোতে হচ্ছে নানা রকম অনিয়ম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে সকল
শিক্ষকদের সাথে স্থানীয় শিক্ষা প্রসাশনের সম্পর্ক ভালো এবং যারা বেশি
পরিচিত (কারণে অকারণে শিক্ষা অফিসে আনাগোনা করে) তাদেরকে বার বার
প্রশিক্ষণে ডাকে। যা মোটেই কাম্য নয়। এতে করে একজন সকল বিষয়ে দক্ষতা অর্জন
করছেন (যদিও প্রয়োগ করছেন না) আবার কোন একজন কিছুই জানছেন না। এ বিষয়ে কঠোর
নীতিমালা সহ মনিটরিং জোড়দার করা একান্ত জরুরী।
উল্লিখিত সকল বিষয়ে মন্ত্রণালয়,
অধিদপ্তর, নেপ, শিক্ষা প্রশাসক ও নীতিনির্ধারকদের প্রাথমিক শিক্ষক
প্রশিক্ষণের ব্যাপারে গভীরভাবে ভাবা দরকার। যত দ্রুত বিরাজমান শিক্ষক
প্রশিক্ষণকে বাস্তবসম্মত ও ফলপ্রসূ করা যাবে দেশের জন্য ততোই মঙ্গল হবে।
পাশাপাশি প্রশিক্ষণের জ্ঞান যেন শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় কাজে
লাগান সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। এ ব্যাপারে
আমাদের শিক্ষকদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করা সহ আরো আন্তরিক হতে হবে।
সূত্র: ইনফো প্রাইমেরী
0 comments: