বালাকোটের যুদ্ধ: উপমহাদেশের মুসলিম সংগ্রামী ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়

 




ঢাকা, বাংলাদেশ – মে ৭, ২০২৫: বালাকোটের যুদ্ধ ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের স্বাধীনতা ও দ্বীন রক্ষার সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর আল ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত বালাকোট দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা এই মন্তব্য করেন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বালাকোটের যুদ্ধের তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৮৩১ সালের ৬ মে বালাকোটে ব্রিটিশ মদদপুষ্ট শিখ বাহিনীর বিরুদ্ধে সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (রহ.) এবং তাঁর অনুসারীদের আত্মত্যাগ উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য এক গভীর প্রেরণা। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এবং দ্বীনের প্রতি অবিচল নিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই যুদ্ধ।

মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন আরও বলেন, বালাকোটের যুদ্ধ আপাতদৃষ্টিতে মুজাহিদীনদের পরাজয় ঘটলেও, এর মাধ্যমে উপমহাদেশে ইসলামের আলোকবর্তিকা প্রজ্বলিত থাকে। এই জিহাদ কেবল একটি সামরিক সংঘাত ছিল না, বরং এটি ছিল একটি আদর্শিক সংগ্রাম, যার শিকড় ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলোতে প্রোথিত। নদিয়ায় ইখতিয়ার উদ্দীন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বিজয়ের মতোই, উপমহাদেশে ইসলামের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সাইয়্যিদ আহমদ শহীদের বালাকোটের জিহাদ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি দেশবাসীকে বালাকোটের ত্যাগ ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ, জাতি ও ইসলামের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।

সভায় বক্তারা আক্ষেপ করে বলেন, বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে বালাকোটের ঘটনাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ও তিতুমীরের সংগ্রাম স্থান পেলেও, তিতুমীরের আধ্যাত্মিক গুরু সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ (রহ.) এবং বালাকোটের জিহাদের কথা উল্লেখ করা হয় না। বক্তারা মুসলমানদের ঈমান ও আকিদা রক্ষায় এবং একটি উন্নত জাতি গঠনে বালাকোটের আদর্শ অনুসরণের ওপর জোর দেন।

ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, স্বৈরাচারী শাসনের পতন হলেও পরিপূর্ণ বিজয় এখনো আসেনি। রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে এখনো তাদের প্রতিনিধিরা সক্রিয় রয়েছে। তিনি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং আগামী সংসদকে প্রতিনিধিত্বশীল করার জন্য আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা চালুর আহ্বান জানান। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে সকল প্রকার চাপমুক্ত থেকে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করার কথা বলেন।

ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিমুদ্দিন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক ও ইয়াসিন আরাফাত প্রমুখ। বক্তারা বালাকোটের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁদের আদর্শ ধারণ করে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

0 comments: