জামায়াতের সাধারণ ক্ষমা ও একটি রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

রাজনৈতিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত:

সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দলগতভাবে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। এটি রাজনৈতিকভাবে একটি সঠিক ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত, যা প্রতিশোধপরায়ণতা, ফ্যাসিবাদী মনোভাব এবং চরমপন্থা থেকে দলকে দূরে রেখেছে।

আইনের দায়িত্ব রাষ্ট্রের:
প্রতিশোধ নয় আওয়ামী লীগের অপরাধীদের বিচার করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কোনো রাজনৈতিক দল নিজ উদ্যোগে প্রতিপক্ষকে বিচার করতে পারে না, কারণ এটি বেআইনি এবং সন্ত্রাসবাদী আচরণের মধ্যে পড়ে। ইতিহাস সাক্ষী, চরমপন্থী দলগুলোই সাধারণত প্রতিপক্ষকে দলগতভাবে বিচার ও হত্যার মাধ্যমে শাস্তি দেয়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী একটি গণতান্ত্রিক ইসলামী দল হওয়ায় বৈধ ও নিয়মতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করেছে। তারা দলীয় নেতাকর্মীদের আদালতে মামলা করার পরামর্শ দিয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে।


সাধারণ ক্ষমার কৌশলগত সফলতা:

জামায়াতের সাধারণ ক্ষমার ফলে আওয়ামী লীগের "ভিক্টিমহুড রাজনীতি" ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের অপরাধী সংখ্যা এত বেশি যে, জামায়াত দলগতভাবে প্রতিশোধ নিতেও পারত না।

ধরা যাক, জামায়াত চরমপন্থার পথ বেছে নিতো—তাহলে তারা হয়তো তিন-চারশ’ পাতি লীগ কর্মীকে হত্যা করতে পারতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, লীগের ফ্যাসিস্ট উচ্চপর্যায়ের দুর্বৃত্তদের সংখ্যা হাজার হাজার, যারা শহরের অভিজাত এলাকায় বসবাস করে এবং প্রচুর সম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা ভোগ করে। তাদের কাউকেই জামায়াত প্রতিশোধের মাধ্যমে স্পর্শ করতে পারতো না। বরং পাতি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা উল্টো আওয়ামী লীগের বড় অপরাধীদের আরও নিরাপদ করতো।

আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ এখন বিচারের মুখোমুখি অনেকেই মনে করেন, আওয়ামী লীগের কিছু সহযোগী ও সুবিধাভোগীরা কখনোই দলটির ফ্যাসিবাদের বিচার চায় না। তারা বরং জামায়াতের প্রতিশোধপরায়ণতাকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগকে বাঁচানোর ফন্দি আঁটতো। কিন্তু জামায়াত দলগত ক্ষমা ঘোষণা করে এই সুযোগ নষ্ট করে দিয়েছে।

এখন সরকারের ওপর দায়িত্ব পড়েছে, আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তদের বিচারের আওতায় আনার। একই সঙ্গে ভোটাধিকার হরণকারী ফ্যাসিস্ট লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নেও সরকার কোনো অজুহাত দেখাতে পারবে না।

জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ ক্ষমা রাজনৈতিকভাবে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। এটি দলটিকে চরমপন্থার পথ থেকে দূরে রেখে একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। একই সঙ্গে এটি আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিচার প্রক্রিয়ার দরজা খুলে দিয়েছে।

0 comments: